Friday, September 6, 2013

বাঁশ খাইলাম বাঁশ

বাসে বান্দর ঝুলা হইয়া কলেজে যাইতাছিলাম। জানপাখিরে একটা কল করন দরকার। পকেটে হাত দিয়া দেখি, মোবাইল গায়েব!

হায়! হায়!! হায়!!! আমার এতো শখের মোবাইল! বুঝতাছিনা বাসায় ফালাইয়া আইলাম নাকি কোন হালা কামডা সারাইছে!

পাশের সিটের আফারে কইলাম, "আমার মোবাইলটা পাইতাছিনা। একটা কল দিবেন?" নাহ। আফায় কল দিলেন না, কইষা একখান থাবড়া দিয়া কইলেন, "শালা, মাইয়া মানুষ দেখলেই মোবাইল হারাইয়া ফালাস, তাইনা? সিমে রোমান্টিক গুনগুন টিউন কইরা আমারে পটানোর চেষ্টা! সিনিয়র-জুনিয়র ও তো দেখি মানস না!" আমি উনার শালা নাকি উনি আমার শালী, সম্পর্কটা ক্লিয়ার করার আগেই দেখি কয়েকটা মজনু আইসা জুটল। উদ্যেশ্য, আমারে হালকার উপর ঝাপসা কয়েকটা দিয়া হাতের সুখ মেটানো, লগে আফার কাছে হিরো হওয়া। কোনমতে সবাইরে ম্যানেজ কইরা আফার কাছ থেইকা মাফ চাইয়া বাস থেইকা নাইমা পড়লাম।

কলেজ গেইটেই বান্ধবীর লগে দেখা। শালী আরেক চীজ।
- কিরে, তোরে এইরাম লাগতাছে ক্যা?
- দোস্ত, মোবাইলটা পাইতাছিনা। একটা কল দিয়া দেখবি?
- হারামজাদা, প্রপোস করার আর মাইয়া পাইলিনা! শেষপর্যন্ত আমারেও...!
- মানে? তোরে আমি প্রপোস করলাম কখন?
- শালা মজা লস? তোর জানপাখিরে কমু?
- কি কইবি?
- এই যে, আমারে প্রপোস করছস!
- আমি তোরে প্রপোস করছি! তোর মত নাক বোঁচা মাইয়ারে!
- কি! আমার নাক বোঁচা! খাড়া, তোর জানপাখিরে কইতাছি!
- ভুল হইয়া গেছে। মাফ কইরা দে। ও কইরে?
- ক্লাসে। তোর উপর মহাক্ষেপা!
- কেন?
- তোরে সতেরটা মিসকল দিছে। ব্যাক করস নাই! আইজ তোর খবর আছে!
অজানা আশঙ্কায় মনটা কাইপা উঠল। আর দাড়াইলাম না। সকাল থেইকাই দৌড়ের উপর আছি। আইজ কপালে কি আছে, আল্লাহই মালুম!

ক্লাসে ঢোকার আগে বন্ধুর লগে দেখা। ওর হাতে মোবাইল দেইখাই আমার মোবাইলটার কথা মনে পইড়া গেল। ভাবলাম, পোলা মানুষ তো আর কইব না যে তারে প্রপোস করতাছি।
- দোস্ত, আমার মোবাইলটা পাইতাছিনা। একটা কল দিবি?
- আবে হালা ডায়ালগটা তোর জানপাখিরে না মাইরা আমারে মারতাছস ক্যা?
- ডায়ালগ মারতাছি কই? আমার মোবাইলটা পাইতাছিনা। তাই তোরে একটা কল দিতে কইতাছি। আর কল দেওয়ার লগে প্রপোসের কি সম্পর্ক?
- হালা টিভি দেখস না? কল দিতে পারুম না। আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নাই!

ফাটা কপাল নিয়া ক্লাসে ঢুকলাম। দেখি, জানপাখি আমার দিকে রক্তচক্ষু কইরা তাকাইয়া আছে! আমার তখন "ব্ল্যাকবোর্ড, দু'ফাক হও। আমি তোমার ভিতরে ঢুইকা যাই!" অবস্থা!
- কল করনাই কেন?
- ইয়ে... মানে...
- ইয়ে মানে কি?
- না মানে আমার মোবাইলটা খুইজা পাইতাছিনা। একটা কল দিয়া দেখবা কই হারাইছি?
- ফাজলামো কর? তুমি আমার লগে ফাজলামো কর?
- ফাজলামো করলাম কই? আমার মোবাইলটা পাইতাছিনা। তাই একটা কল দিতে কইলাম। দিবা?
- আবার ফাজলামো! দোষ কইরা রোমান্স ফলাও? কি ভাবো তুমি আমারে? স্যান্ডউইচ? দুইপাশে রুটি আর মাঝখানে আমি? শোন, আমি বইলাই তোমারে এত সহ্য করতাছি! আর কেউ এত সহ্য করব না! তুমি জানো আমার পিছনে কতজন ঘুরে? কয়টা পোলা আমারে প্রপোস করছে? ডেইলি আমার কাছে কয়টা লাভ লেটার আসে? আমি যদি ... ... ... (মাইয়ারা কমন ডায়ালগ যা মারে, তা মারতাছে আর কি। আর আমিও পোলাগো কমন কাজটা করতাছি। এক কান দিয়া শুনতাছি, আরেক কান দিয়া বাইর করতাছি! )

বাসায় আইসা শুইয়া শুইয়া টিভি দেখতাছি। শালারা অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিজ্ঞাপন দেখাইতাছে নাকি বিজ্ঞাপনের ফাঁকে অনুষ্ঠান দেখাইতাছে, বুঝতে পারতাছিনা। হঠাত্‍ একটা বিজ্ঞাপনে চোখ আটকাইয়া গেল। একটা পোলা একটা মাইয়ারে অনেকভাবে প্রপোস করতাছে। কিন্তু সামান্যের লাইগা সফল হইতে পারতাছেনা। শেষে প্রপোসের লক্ষে রোমান্টিক গুনগুন সেট কইরা কইল, "আমার মোবাইলটা পাচ্ছিনা। একটা কল দিবা!"

ওহ! তাইলে এই ব্যাপার! শালা জিপি! আমারে পুরাই মদন বানাইয়া দিলি!

এইসময় ছোট বইন আইসা কইল,
- ভাইয়া, আমার জন্য আইসক্রিম আনছস?
- টাকা কি গাছে ধরে যে আইসক্রিম খাইতে চাইলি আর আইনা দিলাম!
- আইজকা আম্মা তোর বিছানা গোছাইতে গিয়া তোর মোবাইলটা পাইল। দেখে, মোবাইলে সতেরটা মিসকল! তারপর কি হইল জানস?
- নাহ। জানিনা। জানলে কি আর তোরে জিগাই? তারপর কি হইল?
- তারপর আমার আইসক্রিম খাইতে ইচ্ছা করল। কিন্তু আমার কাছে টাকা ছিলনা!
- আইসক্রিম খাবি তো? এই নে একশ টাকা। তুই আমার আদরের বইন না! তারপর কি হইল, বলনা!
- থ্যাংকু ভাইয়া। তারপর জিগাইল, নীলিমা (জানপাখি) কেডা?
- কি কইলি? তোর বান্ধবী কইলি, তাইনা? আমি জানি তুই আমারে বাঁচাইয়া দিবি! তুই আমার দশটা না, পাঁচটা না, একটামাত্র আদরের বইন!
- নাহ। কইলাম, আমার ভাবী! তোমার (আম্মার) পুত্রবধূ! তোরে একেবারেই বাচাইয়া দিলাম!
কইতে দেরি, খিইচ্চা দৌড় লাগাইতে দেরি নাই!

ওরে মোর খোদা, একলগে এত্তগুলা বাঁশ নিমু কেমনে? একটু তো সময় দাও। হজম করি!

No comments: